মোঃ মোহন মিয়া
স্টাফ রিপোর্টার

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) আবারও পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ-ইন)। বুধবার (২৫ জুন) ভোররাতে পঞ্চগড় সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলার অন্তত তিনটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এ পুশ-ইনের ঘটনা ঘটে।

এ সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। আটকদের মধ্যে কয়েকজন শিশু, কোলের বাচ্চা ও বৃদ্ধ রয়েছেন। বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।

বিজিবির ৫৬ নীলফামারী ব্যাটালিয়নের অন্তর্গত জয়ধরভাঙ্গা, টোকাপাড়া ও ভজনপুর বিওপি সদস্যরা পৃথক অভিযানে এসব পুশ-ইন হওয়া নাগরিকদের আটক করেন।

বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ভোরে সদর উপজেলার জয়ধরভাঙ্গা সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫৮ এর ৯ নম্বর সাব পিলার দিয়ে বিএসএফের শ্যাম বিওপির একটি দল ৭ জনকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করে। একই সময়ে টোকাপাড়া সীমান্তের মেইন পিলার ৭৪৫ এর ৩ ও ৪ নম্বর সাব পিলার দিয়ে নারী ও শিশুসহ আরও ৬ জনকে পুশ-ইন করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা।

এছাড়াও, ভজনপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ৪২৮ এস এর নিকটবর্তী ধানশুকা এলাকা দিয়ে আরও ৫ জনকে পুশ-ইন করা হয়। তাদের সবাইকে সীমান্ত এলাকা থেকে বিজিবির টহল দল আটক করে।

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সবাই নড়াইল জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। অনেকেই পরিবারসহ ভারতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। কাজ হারিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়লে বিএসএফ তাদের রাতের আঁধারে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন,

> “বিএসএফের পাঠানো ১৩ জনকে বিজিবি আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তারা সবাই বাংলাদেশি বলে জানিয়েছে। তাদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের চেষ্টা করছি। পরিচয় যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিজিবি জানায়, আটকদের মধ্যে জয়ধরভাঙ্গা বিওপি’র মাধ্যমে আটক ৭ জন হলেন:—
১. আবেদ শেখ (৪০)
২. রুহুল শেখ (৭০)
৩. জাকারিয়া শেখ (২২)
৪. পারভীন (৩০)
৫. মো. ইছা (১৫)
৬. শারমিন (০৯)
৭. নাজমিন (০৬)
(সবার বাড়ি-হাড়িভাঙা ও মাধবপাশা, কালিয়াগঞ্জ, নড়াইল)

টোকাপাড়া বিওপি’র মাধ্যমে আটক ৬ জন হলেন:—
১. মো. রাজিব ফকির (২৩)
২. মো. আকসেদ মোল্লা (৩০)
৩. মোছা. রেশমা (২২)
৪. মোছা. জামেলা (১৯)
৫. মোছা. ফাতেমা ফকির (০১ বছর)
৬. মো. হাসিবুল মোল্লা (০৪ মাস)
(সবার বাড়ি—বিষ্ণুপুর, কালিয়া, নড়াইল)

ভজনপুর বিওপি’র মাধ্যমে আটক ৫ জন হলেন:—
১. মো. মনির গাজী (৩২)
২. মোছা. সালেহা বেগম (২৫)
৩. মোছা. নাজিয়া (০৮)
৪. মোছা. নাফিজা (০৪)
৫. মোছা. রাবেয়া (০২)
(সবার বাড়ি-বিষ্ণুপুর, মাধবপুর, নড়াইল)

এদিকে, বিজিবি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আটকদের সদর ও তেঁতুলিয়া থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে এ নিয়ে পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে মোট ৮৩ জন নারী, শিশু ও বৃদ্ধকে ভারত থেকে পুশ-ইন করা হয়েছে বলে বিজিবি জানিয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ধরণের ঘটনাকে অমানবিক ও উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে এবং কূটনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধানে জোর দাবি জানিয়েছে।